1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

যেভাবে অপরাধী হচ্ছে কিশোররা

  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০
  • ১৫১ Time View

প্রত্যয় নিউজডেস্ক: 

নাজমুল হুদা

সেদিন রাত আনুমানিক ১০টা। অফিস থেকে বাসায় ফিরছিলাম। তখনই বাসার সামনের গলিপথে অশ্রুজড়িত কণ্ঠে এক মা ও বোনের আজহারি শুনতে পাই। অনেকেই তাদের ঘিরে ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে। কৌতূহল বশত আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী হয়েছে? কান্না করছেন কেন?’ বোনটি বলল, ‘আমার ভাইয়ের অনেক রক্ত লাগবে। খুব দ্রুত রক্তের ব্যবস্থা করতে হবে।’ আহাজারি দেখে জানতে চাইলাম, ‘কত ব্যাগ লাগবে?’ কত ব্যাগ লাগবে তা তার জানা নেই। রক্তের গ্রুপের কথা জিজ্ঞেস করতেও একই উত্তর দিলো। পরে আশেপাশের লোকজন থেকে শুনতে পেলাম, কয়েকজনের সঙ্গে মারামারি করেছে তার ভাই। নাম জব্বার। মারামারির একপর্যায়ে জব্বারকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেছে প্রতিপক্ষ। তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এসব শুনে আফসোস করে বাসায় চলে গেলাম।

পরদিন সকালে ঘুম ভাঙতেই শুনি, এলাকায় একজন খুন হয়েছে। পরে জানলাম, রাতে যেই ছেলেটিকে ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে; সেই ছেলে হাসপাতালে মারা গেছে। নিহত জব্বারের বয়স ১৫ বছর। কৌতূহলী হয়ে যখন আমি মারামারির বিস্তারিত জানতে যাই; তখন শুনি সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বে তাদের মধ্যে মারামারি হয়েছিল। জানতে পারি, সবুজবাগের রাজারবাগ কারখানায় প্রিন্টিংয়ের কাজ সেরে বাসার সামনে আসে জব্বার। প্রথমে ইমনের সাথে তর্কাতর্কি, এরপর ঘটনাস্থলে আসে ইমনের ভাই ইয়াসিন। একপর্যায়ে ইয়াসিন, পকেট থেকে ছুরি বের করে আঘাত করে জব্বারকে। এতেই আহত হয়ে হাসপালে ভর্তি হলে পরদিন সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় জব্বার।

সম্প্রতি আমার এলাকার ঘটনা এটি। এর বাইরেও নিয়মিত এসব ঘটনা পত্রিকা, অনলাইন কিংবা টিভি দেখেই জানতে পারি। এর আগে গত ২৭ আগস্ট সকালে উত্তরখানের খ্রিস্টানপাড়া ডাক্তার বাড়ি মোড় এলাকায় একটি ব্যাটারিচালিত রিকশার চাকা থেকে পানি লাগে হৃদয় নামে এক কিশোরের গায়ে। এ ঘটনা ঘিরে সোহাগ নামের এক যুবককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। তুচ্ছ ঘটনায় হাতাহাতির ঘটনার ৫ দিন পর রাজধানীর চকবাজারে নাদিম নামের এক যুবককে ৩০ আগস্ট প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। ১৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের ইস্পাহানি এলাকায় দুই কিশোর গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় স্থানীয় দুই কিশোর ১৮ বছরের নিহাদ ও ১৫ বছরের জিসান শীতলক্ষ্যায় ঝাঁপ দিলে তাদের মৃত্যু ঘটে।

এসব কিশোরের অধিকাংশই নামি বা বেনামি গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত। ‘কিশোর গ্যাং’ নামে তারা বেশ আলোচিতও বটে। গ্যাংয়ের এসব কিশোররা অনেক সময় তুচ্ছ কারণেও মারামারি করে। এক এলাকার ছেলে অন্য এলাকায় গেলে মারধর, কাউকে গালি দিলে বা যথাযথ সম্মান না দেখালে, এমনকি বাঁকা চোখে তাকানোর কারণেও মারামারির ঘটনা ঘটে। মেয়েলী বিষয় এবং সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব থেকেও অসংখ্য মারামারি হয়ে থাকে। এতে কিশোরদের মধ্যে একসময় অস্ত্র বহন করার প্রবণতা শুরু হয়। অনেকেই আবার মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে। ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে ওঠে তারা।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, মাদক ও অস্ত্রের দাপটসহ বিভিন্ন অপরাধ প্রবণতা বাড়ার কারণে কিশোর গ্যাং তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া এখনকার শিশু-কিশোররা পরিবার, সমাজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যথেষ্ট মনোযোগ না পাওয়ায়ও এ কালচারে ঢুকে পড়ছে। কিশোরদের কেউ যখন বন্ধুদের মাধ্যমে কিশোর গ্যাংগুলোতে ঢুকছে, মাদক ও অস্ত্রের জোগান সহজেই পেয়ে যাচ্ছে; তখন তার প্রলুব্ধ হওয়া এবং অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। কিশোরদের মধ্যে সামাজিক মূল্যবোধ গঠনে যে শিক্ষার দরকার, পারিবারিক ভাঙনসহ বিভিন্ন কারণে সেটি তারা পরিবার থেকে পাচ্ছে না।

সনাতন সমাজ থেকে শিল্প সমাজে প্রবেশ করার সাথে সাথে সামাজিক যে পরিবর্তন হয়েছে, তা মোকাবিলায় আমাদের সে ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। ফলে যারা একেবারেই নিম্নবিত্ত; তারা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে লালিত-পালিত হওয়ার পরিবর্তে বাইরে বা বস্তিতে বেড়ে উঠছে। পশ্চিমা দেশে সমাজ পরিবর্তনের সাথে সাথে সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ও শিক্ষা পদ্ধতিতে অনেক আগেই পরিবর্তন এনেছে। আমরা তা পারিনি। এটা সরকারের একার নয় বরং সামাজিক সমস্যা। এ ছাড়াও অপরাধে জড়িয়ে পড়া শিশু-কিশোরদের সংশোধনাগারে রাখার বিষয়গুলো এখন অনেক দেশে নেই। তাই কিশোরদের এসব অপরাধের দিকে যেতে হচ্ছে।

কিশোর গ্যাং কালচার থেকে বেরিয়ে আসতে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না। রাষ্ট্র ও সংস্থার তত্ত্বাবধানে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সমাজ পরিবর্তনের সাথে কী চাহিদা সেটি চিহ্নিত করে, সে ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে শিশু পরিচর্যাকেন্দ্র তৈরি করতে হবে। নৈতিকতার শিক্ষা যেহেতু শিশুরা পরিবার থেকে পেতে ব্যর্থ হচ্ছে। তাই স্কুলের পাঠ্যবইয়ে বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এদের বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ার পাশাপাশি প্রত্যেক পরিবারকে সচেতন হতে হবে। তাদের সন্তানরা কোথায় যায়, কার সাথে মেসে তার খোঁজ-খবর রাখতে হবে। কিশোররা স্মার্টফোন চালালে, সেটির তদারকি করতে হবে পরিবারকে। যাতে স্মার্টফোন কালচার সর্বনাশ ঘটাতে না পারে।

এ ছাড়া কিশোরদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ, সমাজের রীতি-নীতিগুলো ধারণ করাতে পরিবারকেই ভূমিকা রাখতে হবে। রাজনৈতিক বড় ভাইদের ব্যাপারে সোচ্চার হতে হবে। সমাজে অপরাধী হওয়ার সুযোগ বন্ধ করতে হবে। পরিবারে কিশোরদের একাকী বা বিচ্ছিন্ন না রেখে যথেষ্ট সময় দিতে হবে। খেলাধুলাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কাজের সাথে জড়িত থাকার সুযোগ দিতে হবে। তাহলেই হয়তো কিশোরদের মধ্যে এসব অপরাধপ্রবণতা কমবে। কিশোর গ্যাংয়ের বিলুপ্তি ঘটবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, সম্মান ৩য় বর্ষ, বাংলা বিভাগ, সরকারি তিতুমীর কলেজ।

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..